নিষ্প্রাণ অনুভব

নিষ্প্রাণ অনুভব
-রীণা চ্যাটার্জী

সুধী,
১৫ই আগষ্ট- স্বাধীনতা দিবস। এই দিনটা ভারতের ইতিহাসে, বছরের দিনপঞ্জিতে যুক্ত হওয়ার আগে বিদেশী শাসকের যূপকাষ্ঠে বলি হলো কত নিষ্পাপ প্রাণ, স্বাধীনতার আকাঙ্খা মুঠোয় নিয়ে। দেখে যেতে পারেনি ওরা স্বাধীনতার উৎসব, দেখেনি জীবন্মৃত মায়ের শূণ্য কোল, শোনেনি আর্তনাদ, হাহাকার। যেদিন স্বাধীনতার পতাকা হাওয়ায় উড়ে মুক্তির বার্তায় মুখরিত হয়ে ছড়িয়ে গেল আকাশে-বাতাসে, সেদিন নেতাদের উল্লাসে, আনন্দে, পারস্পরিক অভিনন্দন বার্তার ছবিকে ছাপিয়ে দেশমাতৃকার মাটি স্বাধীনতার কণাটুকুও ছুঁতে পারেনি। দেশের সাধারণ মানুষ হয়তো জানতে পারলো, বুঝতে পারলো কি? মুষ্টিমেয় জনগণ, নেতা-কুর্সি, ক্ষমতার ব্যবহার- অপব্যবহারে, অহঙ্কারে, লোভে, উন্নতি, উন্নয়নশীল নানান পরিভাষার পরিচ্ছদে কুক্ষিগত হয়ে গেল যেন কেমন করে স্বাধীনতার মুক্তি। ফিকে হয়ে এলো স্বাধীনতার যূপকাষ্ঠের শোণিত ধারার রক্তিম আভা, তারপর ধূসর-মলিন।
ঘুরে দেখলে কি দেখতাম? লুকোনো এক জগৎ- যেখানে স্বাধীনতা না এলে কিছু যায় আসত না, ঠিক যেমন আজ ৭৫ বছর পরেও কিছু যায় আসেনি। অমৃতের ভাগ মহোৎসব ঘিরে ভাগাভাগি হয়ে গেছে, লুকোনো জগৎ আজও গরলে বাঁচে। ওরা নীলকণ্ঠ– ক্ষুধার বেদনায় নীল, অসহায় জীবনের ছবিতে নীল, ওদের চোখের জলের শুকনো ধারায় গালে স্থায়ী জলছবি- তবু ওরা বাঁচে, বেঁচে থাকে ধুকপুকে জীবন আর ভোগান্তির আয়ু নিয়ে।
বড়ো বেআক্কেলে কথা দিনক্ষণ না দেখেই বলছি, জানি অনেকের এটাই মনে হবে। এটাও মনে হবে, বলেই বা কি লাভ! এ তো প্রতি বছরের ‘থোর-বড়ি-খাড়া, …’ নতুন কি? আদতে আমি মানুষটাই তো বড়ো বে-আক্কেলে,নাহলে ‘হর ঘর তিরঙ্গা’-র মতো মহান উৎসব থেকে দূরে সরে থাকার জন্য ঘরটা রঙীন করা হলো না- মনটা চাইলো না যে…স্বাধীনতার যূপকাষ্ঠের ধূসর রঙটা কেমন যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে মানসপটে, নিষ্প্রাণ হয়ে যায় স্বাধীনতার অনুভব এই দিনগুলো ছুঁয়ে গেলে…

সকল শুভানুধ্যায়ীদের জন্য রইলো আগামীর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে।

Loading

Leave A Comment